মৌলিক ও যৌগিক একক (পাঠ-৬)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও পরিমাপ | NCTB BOOK
8.4k

আমরা যা পরিমাপ করি, তাকে সাধারণত রাশি বলি। যেমন: টেবিলের দৈর্ঘ্য একটি রাশি, উচ্চতা একটি রাশি। এই রাশিগুলো পরিমাপের জন্য বিভিন্ন রকমের একক আছে। যে কোনো একক দ্বারা কোনো কিছুকে সরাসরি পরিমাপ করা যায়। যেমন: এককের মাধ্যমে কোনো একটি বস্তুর দৈর্ঘ্য সরাসরি পরিমাপ করা যায়।

দৈর্ঘ্যের একক, ভরের একক, সময়ের একক, তাপমাত্রার একক, বিদ্যুৎ প্রবাহের একক, আলোক ঔজ্জ্বল্যের একক ও পদার্থের পরিমাণের একক, এই সাতটি একককে বর্তমানে মৌলিক একক হিসেবে ধরা হয়। অন্য কোনো রাশিকে পরিমাপ করার ক্ষেত্রে কেবল একটি মৌলিক একক দ্বারা এর পরিমাপকে প্রকাশ করা যায় না। যেমন: একটি শ্রেণিকক্ষের ক্ষেত্রফল পরিমাপের ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্যের দুটি এককের গুণফলের ওপর নির্ভর করতে হয়। আয়তনের ক্ষেত্রে তিনটি এককের গুণফল দরকার। এই সমন্বিত এককই হলো যৌগিক বা লব্ধ একক।
যেমন: ক্ষেত্রফলের একক হলো দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের এককের গুণফল। অনুরূপভাবে আয়তনের একক হলো কোনো বস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার এককের গুণফল। বেগের একক হলো দৈর্ঘ্যের একক ও সময়ের এককের অনুপাত।

এককের আন্তর্জাতিক পদ্ধতি
কোনো কিছুর পরিমাণ নির্ণয়ের বিভিন্ন একক পদ্ধতি প্রচলিত আছে। যেমন: তোমার উচ্চতা কত? এর উত্তর বিভিন্ন রকম হতে পারে। সাধারণত আমরা বলি ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। আবার জাতীয় নিবন্ধন ফরম বা পাসপোর্টের ফরম পূরণের সময় আমরা লিখেছি ১ মিটার ৬১ সেন্টিমিটার। এর মানে কী? একই পরিমাপের জন্য আমরা প্রচলিত বিভিন্ন একক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। এগুলো এমকেএস (মিটার, কিলোগ্রাম, সেকেন্ড), এফপিএস (ফুট, পাউন্ড, সেকেন্ড) ও সিজিএস (সেন্টিমিটার, গ্রাম, সেকেন্ড) পদ্ধতি নামে প্রচলিত। দীর্ঘকাল ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন একক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। অথাৎ একই রাশি পরিমাপের জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন একক ব্যবহার করা হত। এককের এই বিভিন্নতার কারণে উদ্ভূত নানা অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৬০ সাল থেকে পৃথিবীর সমগ্র দেশে একটি সাধারণ পরিমাপের পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এটিকে এসআই বা ইন্টারন্যাশনাল সিস্টেম অব ইউনিট বলা হয়। এই আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সকল ভৌত রাশির জন্য কেবল একটি নির্দিষ্ট একক নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন: দৈর্ঘ্যের একক মিটার, ভরের একক কিলোগ্রাম, সময়ের একক সেকেন্ড, তাপমাত্রার একক কেলভিন, বৈদ্যুতিক আধানের একক কুলম্ব, আলোক ঔজ্জ্বল্যের একক ক্যান্ডেলা ও পদার্থের পরিমাণের একক মোল। এগুলো বর্তমানে এস. আই. পদ্ধতির মৌলিক একক।

দৈর্ঘ্যের একক
বর্তমানে দৈর্ঘ্য পরিমাপে আন্তর্জাতিক একক হলো মিটার। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ১৮৭৫ সালে একত্রে বসে দৈর্ঘ্যের এক মিটারের পরিমাণ নির্ধারণ করেন। তাঁরা প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম নামক মিশ্রিত ধাতুর তৈরি একটি দণ্ডের দুই প্রান্তে দুটি দাগ দেন। শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঐ দুটি নির্দিষ্ট দাগের মধ্যকার দূরত্বকে তাঁরা এক মিটার হিসেবে নির্ধারণ করেন।

দৈর্ঘ্যের এককের গুণিতক ও ভগ্নাংশ
আমরা যখন কাপড়, টেবিলের দৈর্ঘ্য কিংবা কক্ষের দৈর্ঘ্য মাপি, তখন 'মিটার' এককটি ব্যবহার করি। কিন্তু একটি পেনসিলের দৈর্ঘ্য মাপতে ব্যবহার করি সেন্টিমিটার (সংক্ষেপে সেমি)। আবার আমরা যখন একটি পয়সার পুরুত্ব মাপতে যাব, তখন আমরা কিন্তু এর চেয়েও ক্ষুদ্রতর একক ব্যবহার করে থাকি। এটি হলো মিলিমিটার (সংক্ষেপে মিমি)।
অন্যদিকে আমরা বেশি দূরত্ব পরিমাপ করতে (যেমন ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব) ব্যবহার করি কিলোমিটার (সংক্ষেপে কিমি)। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিলোমিটার, মিটার, সেন্টিমিটার ও মিলিমিটারের প্রয়োগ খুবই বেশি দেখা যায়। এদের মধ্যে সম্পর্ক হলো-

১ কিলোমিটার = ১০০০ মিটার
১ মিটার = ১০০ সেন্টিমিটার
১ সেন্টিমিটার = ১০ মিলিমিটার
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...